খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ২০ মে, ২০২৪

Breaking News

  চলে গেলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য লেখক হোসেনউদ্দিন হোসেন
  কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং শুরুর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
  ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : কাদের

দাম বাড়ার পর খোলাবাজারে ডলার উধাও

গেজেট ডেস্ক

রাজধানীর দিলকুশা এলাকায় একটি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে গ্রাহক পরিচয় দিয়ে ডলারের দাম জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার কাছে ডলার নেই। তবে ব্যবস্থা করে দিতে পারব। সে ক্ষেত্রে দাম দিতে হবে ১২৮ টাকা করে।’ একই এলাকার আরেকজন মুদ্রা ব্যবসায়ী ১২৬ টাকা দর হাঁকেন।

এভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন ও গুলশান এলাকায় মানি চেঞ্জারগুলো ঘুরে ডলারের সংকট দেখা যায়। অধিকাংশ মানি চেঞ্জার থেকে বলা হয়, তাদের কাছে ডলার নেই। দু-একটি প্রতিষ্ঠানে পাওয়া গেলেও দাম চাওয়া হয় ১২৬-১২৮ টাকা।

ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ায় খোলাবাজারে ডলার নিয়ে আবার অস্থিরতা শুরু হয়েছে। একাধিক বিশ্লেষক বলেন, ডলারের দাম এক দিনে ৭ টাকা বাড়ানোয় মানি চেঞ্জারগুলো ডলার বিক্রি করছে না। আবার যাঁদের কাছে খুচরা ডলার আছে, তাঁরাও বিক্রি না করে রেখে দিয়েছেন। খোলাবাজারে দাম কত বাড়ে তা দেখার অপেক্ষায় আছেন সবাই। এমন পরিস্থিতিতে খোলাবাজারে ডলার মিলছে না।

জানা যায়, আগের দিন বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ডলারের দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয়, তখনো খোলাবাজারে নির্ধারিত দর ছিল ১১৬ টাকা। যদিও ব্যবসায়ীরা ১১৮ থেকে ১১৯ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ার পরই খোলাবাজারে ডলারের সংকট তৈরি হয়।

মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব মো. হেলাল উদ্দিন সিকদার অবশ্য দাবি করেন, ডলার ১২১-১২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘খোলাবাজারে ডলারের তেমন কোনো সংকট ছিল না। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত দরেই ডলার বিক্রি করতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে ডলারের দর ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ায় একটু সমস্যা তৈরি হয়েছে। একসঙ্গে এত টাকা না বাড়ালেই ভালো হতো। তবে আমরা চেষ্টা করছি, যাতে ডলারের দাম খুব বেশি বেড়ে না যায়।’

চিকিৎসার জন্য আগামী সপ্তাহে দেশের বাইরে যাবেন মোহাম্মদ রফিকুল আলম। সংবাদমাধ্যম থেকে হঠাৎ জানতে পারেন ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়ার কথা। দাম আরও বেড়ে যায় কি না, সে আশঙ্কায় গতকাল ডলার কিনতে যান দিলকুশা এলাকায়। কিন্তু চারটি মানি চেঞ্জার ঘুরেও তিনি ডলার পাননি। রফিকুল আলম জানান, এখন কারও মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ডলার পাওয়া যায় কি না, সেই চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) সকালেই জানতে পারলাম, সরকার নাকি ডলারের দাম ৭ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে। এ জন্য ডলার কিনতে এসেছি। এখন পর্যন্ত চারটি মানি চেঞ্জারে গিয়েও ডলার পাইনি। তারা বলছে, ডলার নেই। অন্য জায়গায় যোগাযোগ করতে বলেছে। এখন চিন্তা করছি, কারও মাধ্যমে ব্যাংক থেকে পাওয়া যায় কি না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘আমাদের খুচরা ডলারের পর্যাপ্ত মজুত আছে। সরবরাহও ঠিক আছে। ব্যাংকে এখন ৫০ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ক্যাশ ডলার মজুত আছে। এখন কেউ বিক্রি করবে কি করবে না, সেটা তার নিজস্ব বিষয়। যারা মানি এক্সচেঞ্জে ডলার পাননি, তাঁরা ব্যাংকে গেলেই কিনতে পারবেন।’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তে ডলারের দাম দীর্ঘদিন ১১০ টাকায় বেঁধে রাখার পর বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম একসঙ্গে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকায় উন্নীত করে। এতে ডলারের সঙ্গে টাকার বড় অবমূল্যায়ন করা হয়।

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে। ওই সময় কিছু নীতি সংস্কারসহ বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়। ঋণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর দুই কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি পেয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় কিস্তিতে ৭০ কোটি ডলার পাওয়ার কথা আগামী মাসে। তার আগে পর্যালোচনা বৈঠক করতে ঢাকায় আসে আইএমএফের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল। বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটি জানায়, দুর্বল অবস্থা থেকে ব্যাংক খাতকে টেনে তুলতে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

কয়েকজন ব্যাংকার জানান, ডলারের দাম এত দিন ১১০ টাকা বেঁধে দেওয়া থাকলেও ১১৭-১১৮ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হয়েছে। যদিও নথিপত্রে দেখানো হয়েছে ১১০ টাকা। নতুন ঘোষণায় বিদেশে থাকা অর্থ স্থানান্তর প্রতিষ্ঠানগুলো ডলারের দাম বাড়িয়ে দেবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, ঋণের সুদ ও ডলারের দাম বাড়লে তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করবে।

এত দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করে আমদানি ও রপ্তানি থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহকের কাছে কত দরে ডলার কেনাবেচা করা হবে, তা ঠিক করত বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। এখন থেকে ডলারের দাম নির্ধারণে বাফেদা বা এবিবির কার্যত কোনো ভূমিকা থাকবে না বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

 

খুলনা গেজেট/েএইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!